কবির হোসেনের কবিতা

কবির হোসেনের কবিতা

পাঠ প্রতিক্রিয়া

কবিমাত্রই নিঃসঙ্গ। নিঃসঙ্গতা ছাড়া কবিতাসৃষ্টি হয় না। মুখরতায় হয় সংবাদ৷ একাকিত্বে ডুবতে ডুবতে কবি আলাদা হয়ে যান প্রচলিত পৃথিবী থেকে। তার আর পৃথিবীর মধ্যে একটা অদৃশ্য পর্দা দুলতে থাকে। কবি সমস্ত পৃথিবীর মুখরতা নিয়ে পরমশূন্য নিঃসঙ্গতায় ভিজতে ভিজতে আবিষ্কার করেন এক একটি পংক্তি।

যেন ভুল করে সদর দরজাটা উল্টা সেট করে ফেলেছি

দরজার যে দিকটা বাইরে থাকার কথা ছিল সেটা এখন ভেতরে, ভেতরেরটা বাইরে

এখন আমাকে ঘরের ভেতর থেকে নক করতে হয়—

দরজা খুলে দেয় বাইরের কেউ না কেউ

আমার ঘরে যেন পৃথিবীর সবাই থাকে, কেবল আমি থাকি বাইরে

ভুল দরজায় ঢুকে আছি / কবর কি ব্যক্তিগত ডাস্টবিন

কবির হোসেনের কবিতা পড়লে আপনার মধ্যে আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটবে। প্রচলিত জীবন যাপনের নানা উপকরণের সাথে ভিন্নরকম এক যোগাযোগের পরিচয় ঘটবে। আপনি চমকে যাবেন। ভাবতে থাকবেন। আপনার অবাক লাগবে! ভাববেন, আরে! এভাবে তো ভাবিনি! আপনার মধ্যে অনির্বচনীয় এক ভাললাগা কাজ করবে।

উত্তরাধিকার রীতিতেই দাদার পুরোনো কবরের ওপর বাবাকে কবর দেওয়া হয়েছে

বাবার পুরোনো কবরের ওপর নাকি আমাকে কবর দেওয়া হবে

তবে বলে দিয়েছি— আমার কবর যেন একটু বেশিই খোঁড়া হয়; যে পর্যন্ত দাদা শুয়ে আছেন

ছোটকালে বরাবরই যে বাবাকে ছেড়ে আমি ঘুমাতে চলে গেছি দাদার বিছানাতে

পারিবারিক কবরস্থান / কবর কি ব্যক্তিগত ডাস্টবিন

কবির হোসেনের কবিতা পড়ি ফেসবুকে। প্রথমবার পড়ে চমকে যাই। পড়ে গুগল এবং ফেসবুকে আরও কিছু কবিতা পড়ি। অনলাইনে অর্ডার করি তার বই- ব্রেকিং নিউজ। দুঃখজনক কারণে টাকা পে করার পরও বইটি পাইনি। যাক, দুঃখ নেই।

চন্দ্রবিন্দু থেকে প্রকাশ হয় তার দেশলাই কাঠির অগ্নিপরীক্ষা। এটা চন্দ্রবিন্দুর অফিস থেকে সংগ্রহ করি। চন্দ্রবিন্দুর কর্ণধার কবি চৌধুরী ফাহাদ তার প্রসঙ্গে আমাকে এক লাইনে বলেন- কবির হোসেন আপাদমস্তক কবি, তার জীবনটাই একটা কবিতা। কথাটা আমার মাথায় গেঁথে যায়।

🟢 বৃষ্টির একটি ফোঁটা কাঁটাতারে কেটে দ্বি-খণ্ডিত হয়ে জল ও পানি হয়ে যায়।

🟢 ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি আছে বলেই চুড়ির শব্দে এত প্রণয়!

🟢ছায়া ক্রমশ লম্বা হয় বলে— বেঁটে লোকটা রোদে দাঁড়িয়ে থাকে।

🟢স্কুলের মতো জীবনেও ভাঙা জানালা আছে, কেউ কেউ তো পালিয়ে যাচ্ছে টিফিনে!

🟢ধান সোনালি হলো, কৃষক স্বর্ণকার হলো না।

🟢দুধ অল্পতেই বিদ্রোহী হয়ে ওঠে— আগুন নেভাতে পাতিল টপকে আসে।

🟢আঁচলের গিঁট থেকে টাকা বের করতে গিয়ে মা দেখেন সেখানে আমি লুকিয়ে আছি।

🟢চিরুনি অভিযানে দুই-চারটা চুল বা উঁকুন আসে, মাথা আসে না কখনো।

🟢মাছ, তোমার দেহে এতো কাঁটা, বিঁধে না?

🟢পিঠের যেখানে মায়ের ঝাড়ুর দাগ, সেখানে কখনো ময়লা জমেনি!

🟢জেলখানার ভেতরেও গাছ হয়, জন্মানোর অপরাধে।

🟢প্রেমিকার ঠোঁটে দারুণ ঘাম, চুমুতে আমার লবণ বেশি হয়ে যায়।

🟢মেয়েটার শরীরভর্তি তিল, লোকজন তাকে কালো বলে।

🟢তোমার ঠোঁটের কোণে তিল, আমি কালোজিরা ভেবে সুস্বাস্থ্য রক্ষা করে যাচ্ছি।

🟢বরফের দেশে অযথা বৃষ্টি আমি, তুমি মরুর রোদ।

🟢নিজেকে নক করে দেখেছি, ভেতরে কেউ নেই।

🟢তোমাকে রাখবো বলে, বুকে সাহস রাখি না।

ক্ষুধার্ত মাছের স্বাদ / প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু

আমার পঠিত কবিতার মধ্যে যে কয়েকজন কবির কবিতা আমার ভালো লাগে কবির হোসেনের কবিতা তার মধ্যে অন্যতম। আমি চাই কবির হোসেন কবিতা লিখতে লিখতে, কবিতার জীবন যাপন করতে করতে শতায়ু হোন।

সংগ্রহ করতে পারেন কবির হোসেনের বইসমূহ-

১. ব্রেকিং নিউজ
২. দেশলাই কাঠির অগ্নিপরীক্ষা
৩. ভাড়ায় চালিত পা
৪. ক্ষুধার্ত মাছের স্বাদ
৫. মুক্তি পেতে হলে যাব
৬. কবর কি ব্যক্তিগত ডাস্টবিন

শহীদুল ইসলাম অর্ক
১১।০২।২০২৪

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *