‘আমার মরতে খালি দেরি হয়ে যায়’
কুয়াশায় ঢেকে গেছে দিন। ধূসর সোয়েটার পরা আকাশ বাড়িয়ে দিয়েছে মনোটোনাস সময়ের আয়ু- স্ট্রেসফুল! এমনি এক গ্লানিদগ্ধ দুপুরে ইন্টারনেটে পড়ি ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘অমরতা’।
মরতে আমার খালি দেরি হয়ে যায়!
আকাশের কিমাকার মেঘদল দেখে
আমি একা মরে মরে বেঁচে থাকি রোজ
আর বেঁচে যেতে গিয়ে পুনরায় ভাবি,
পরদিন পেতে পারি মরণের খোঁজ।পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
কোনো সাপের কামড়ে, হঠাৎ বিমারে,
পথে হেঁটে যেতে যেতে বাসের তলায়!আমার কাফন তবু চুরি হয়ে যায়
আমার গায়ের জামা ছোট হয়ে যায়।পৃথিবীতে আমি মরে যেতে পারতাম
হাসতে হাসতে একা মাথা ঘুরে পড়ে,
ধারালো ছুরিতে আর কফির চুমুকে!কফির বদলে লোকে বিষ খেতে দেয়
আমি এক চুমুকে তা খেয়ে উঠে ভাবি,
এবার আমারে আর যাবে না বাঁচানোআকাশের মেঘদল উড়ে গেলে দেখি
বিষের গেলাসে আবে হায়াত মেশানো!
আমি লিখতে না পারার কারণে প্রচন্ড হতাশায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সাহিত্য পড়বও না, লেখালেখিও আর কখনো করব না। শেষ।
যদিও দু’চারটি লেখার লাইন ছিল আমার কাছে অক্সিজেনের মত। তবুও আত্মবিনাশের ফয়সালা করেছিলাম।
ইন্টারনেটে সার্চ করে পড়তে থাকি ইমতিয়াজ মাহমুদ। মনে পড়ে, সেদিন আমার ওয়েব হিস্টোরির ৯৯% ছিল ইমতিয়াজ মাহমুদময়। ডুবন্ত মানুষ যখন শেষ মুহুর্তে মাথা তুলে জলের উপরে, বুকভরে নেয় অক্সিজেন- আমার অবস্থা ছিল তেমনিই। বাঁচবার এক তুমুল আয়োজন পেয়ে সিদ্ধান্ত বদল করি।
দ্যা ম্যাজিশিয়ান
ইমতিয়াজ মাহমুদ পড়তে পড়তে এমন একটা ঘোরের মধ্যে থাকতাম যে, যে কোনো ঘটনায় অনুমান করার চেষ্টা করতাম- ইমতিয়াজ মাহমুদ কী লিখতেন এ বিষয়ে। যদিও লেখার সময় যথাসাধ্য চেষ্টা করতাম তার প্রভাব এড়ানোর। ইমতিয়াজ মাহমুদ এমন একজন কবি যিনি তার লেখার জাদু দিয়ে কয়েক প্রজন্মকে আবিষ্ট করে রাখতে পারেন।
একদিন হঠাৎ করে ইমতিয়াজ মাহমুদকে নিয়ে একটি কবিতা লিখে ফেলি। বলাবাহুল্য সেটা ইমতিয়াজ মাহমুদের মত বয়ানেই লেখা। এটা ইচ্ছাকৃত। কবিতার নাম ম্যাজিশিয়ান। রাতে পোস্ট দিই ফেসবুকে। আমার প্রত্যাশা ছিল- হয়ত তিনি একটা রিঅ্যাকশন দিবেন। কিন্তু আমাকে চুড়ান্ত লেভেলে অবাক করে দিয়ে তিনি সেটা তার ওয়ালে পোস্ট করেন। এরপর অনেকেই সেখানে পজেটিভ নেগেটিভ কমেন্ট করতে থাকেন। আর জোয়ারের পানির মত ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে থাকে।
ইমতিয়াজ মাহমুদ এমনই এক ম্যাজিশিয়ান!
পাঠকের মৃত্যু
আমার আব্বা খুব ভালো পাঠক ছিলেন। তিনি গত হয়েছেন ২০২০ সালে জানুয়ারিতে, করোনা মহামারী শুরুর পূর্বে। এর আগে অনেকদিন অসুস্থ ছিলেন। তিনি যখন সুস্থ ছিলেন- প্রচুর বই পড়তেন। ক্লাসিক সাহিত্য থেকে শুরু করে এমনকি ডিটেকটিভ বইও পড়তেন। আমি পাঠাভ্যাস পেয়েছি আব্বার কাছ থেকে। ইমতিয়াজ মাহমুদের লেখার সাথে এমন একটা সময় পরিচয় হল তখন আমার আব্বা চোখে দেখেন না প্রায়। অসুস্থ। সাহিত্য পাঠ নিয়ে একসময় তার সাথে অনেক কথা হত। তিনি আমাকে তার মুগ্ধ পাঠ অভিজ্ঞতার কথা বলতেন। মাঝে মাঝে ভাবি রুমি-ভক্ত আব্বা ইমতিয়াজ মাহমুদ পড়লে নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন।